শেখ হাসিনার পতন, ছাত্র জনতার নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর স্বাধীনতা
শেখ হাসিনার পতন, ছাত্র জনতার নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর স্বাধীনতা
গত
৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলনের চাপে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য
হয় এবং নতুন করে স্বৈর সরকারের পতনের মাধ্যামে বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হয়। ৮ আগষ্ট
অন্তর্বর্তী সররের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ
ইউনুস। নতুন বাংলাদেশের জনগণ নতুনভবে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য এবং সুন্দর বাংলাদেশ
গড়ার সপ্ন দেখতে থাকে। তবে সারাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর কিছু বিচ্ছিন্ন
গঠনার সূত্রপাত হয় তা আজকে আলোচনা করবো।
স্বাধীন বাংলাদেশের গণভবন ও সংসদ ভবন লোট
ছাত্র
জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ৫ আগষ্ট দুপুরে দেশ ত্যাগ করে যখন ভারতে পলিয়ে যায়,
তথন গণভবন অরক্ষিত হয়ে পড়ে তাই দেশের জনগণ বিনা বাধায় গণ ভবনে প্রবেশ করে। দ্বীর্ঘদিনের
স্বৈরশাসনের ক্ষোভের কারণে জনগণ গনভবনে প্রবেশ করে গনিমতের মাল হিসাবে শেখ হাসিনার
ব্যবহৃত জিনিষ সহ গণভবনেরর সরকারী জিনিষপত্র লোট করে নিয়ে যায়। অনেকে মজার ছলে গনভবনে
প্রবেশ করলেই কিছু সুবিধাবাদী লোক এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লোট করে। গাছ, মাছ, তরকারী,
টিভি, ফ্রিজ, এসি, খাট, আলমারী, লেপ, তুষক সহ শেখ হাসিনার ব্যবহার করা কাপড় লোট করে
নিয়ে যায়। যা দেখতে অনেকটা দৃষ্টিকটু ও অস্মানজনক।
একই
অবস্থা হয় সংসদ ভবনের, সংসদ ভবণের অধিবেশক কক্ষে প্রবেশ করে চেয়ারে বসে সিগেরেট খাওয়ার
ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাছাড়া সংসদ ভবন থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ নগদ অর্থ চুরি হয়েছে।
অনেকে এই সব ক্ষোভ করে করে এবং ভুল বুঝেতে পেরে আবার তা ফিরিয়ে দিয়ে যায়। আর যারা সুবিধাবাদী
তারা আর ফিরৎ দেয় নাই। তাদের বোঝা উচিত ছিল এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ কারো ব্যাক্তিগত
না।
সারাদেশে ডাকাতের আতঙ্ক ও ডাকাত আটক
স্বাধীন
দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগে সারাদেশে ব্যাপক হারে চুরি ডাকাতি শুরু হয়। তবে ঢাকা
শহরে ডাকাতির ঘঠনা সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। ফলে চোর ডাকাত ঠেকাতে সারা দেশে গ্রামে, মহল্লায়
নিজ নিজ উদ্ধোগে পাহাড়ার ব্যাবস্থা করা হয়। এবং চোর ডাকাত আটক করে তাদেরকে বিভিন্ন
অবিনব কায়দায় শাস্তি দেওয়া হয় যা অনেকটা হাস্যকর। যেমন- ডাকতদের নিয়ে গান গাওয়ানো,
লুঙ্গি নাচ দেওয়ানো, কানে ধরে উঠবস ইত্যাদি শাস্তির ভিডিও ও ছবি সামাজিক মাধ্যামে ভাইরাল
হয়। তবে এতে বাঙ্গালী জাতি প্রমান করে যে তারা একত্র হয়ে কাজ করলে যে কোন সমস্য ও প্রতিকূল
পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে তারা সক্ষম।
পুলিশের উপর আক্রমণ ও পলিশের কর্মবিরতি ঘোষণা
শেখ
হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের উপর নির্যাতন ও জুলুমের মাধ্যম হিসাবে সবচেয়ে বেশী
ব্যবহার করেছে পুলিশ বাহিনীকে। তাছাড়া ছাত্রদের আন্দোলনকে বাধা দিতে পুলিশ বাহিনী নীরিহ
মানুষের উপর আঘাত সহ সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। তাই স্বাধীন দেশের জনগণের
ক্ষোভ সবচেয়ে বেশী ছিল পুলিশ বাহিনীর উপর। বাংলাদেশের ৬৩৯ টি থানার মধ্যে প্রায় ৪৬০
টি থানা সাধারণ জনগণ দখন করে পুশিদেরকে আটক করে নির্যাতন করে। তাছাড়া থানায় আগুন লাগিয়ে
পুলিশের অস্র, গোলাবারদ, পুলিশ ভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে করে পুলিশ বাহিনী তাদের
নিরাপ্তার সার্থে কর্মস্থল ত্যাগ করে কর্মবিরতি ঘোষনা করে। তখন দেশের আইন শৃংঙ্খলা
পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধিকরে সরকার দ্রুত পুলিশ বাহিনীকে থানায় ফিরে আসতে নির্দেশ
দেয়।
পুলিশ
থানায় ফিরে আসার শর্তে কিছু দাবি পেশ করে। তাদের দাবি হচ্ছে তারা সরকারের কথা বা তাদের
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বা আদেশ মানতে বাধ্য। আর এই পরিস্থিতির জন্য সকল পুলিশ দায়ি
নয়। যারা ক্ষমতার স্বার্থে অন্যায়ের পক্ষ অবল্বন করেছে তাদেরকে চাকরি থেকে অব্যহতি
দিয়ে নতুন করে পুলিশ কমিশন ঘঠন করতে হবে। তাদের জিবনের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। তাছাড়া
তাদের পোষার পরিবর্তন করতে হবে। কারণ তাদের এই পোষাকের উপর সাধারন মানুষের ক্ষোভ জমে
আছে এবং দেশের জনগণ তাদের উপর আস্থা হারিয়ে পেলেছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের
দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাদের কর্মস্থলে ফিরার জন্য আদেশ করেন এবং পুলিশ তাদের
কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করে।
হিন্দু মন্দিরে হামলা
ও মাদ্রাসা ছাত্রদের মন্দির পাহারা
শেখ
হসিনার পদত্যাগের পর সারাদেশে হিন্দু মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা হওয়ার আশঙ্খা
করা হয়। এবং কিছু কিছু জায়গায় মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলার ঘঠনা গঠে। শুধু
তাই না আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি ভাংচুর আগুন লোটপাটের ঘটনা ঘটে। সারাদেশে শেখ
মজিবুর রহমানের যত মূর্তী ছিল তা কিছু সময়য়ের ব্যাবধানে ভেঙ্গ মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া
হয়। এই জন্য সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মনে করে যে আওয়ামীলীগ সরকার ভারতের
কাছে ও বিশ্বের কাছে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বাচতে সংখ্যালঘু ও হিন্দুদের উপর আঘাত
করতে থাকে। ফলে সারা দেশের জনগন ছাত্ররা এমনকী মাদ্রাসার ছাত্র হুজুর সবাই মিলে মাথায়
টুপি দিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে; সারারাত জেগে মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়ি পাহারা দিয়েছে।
যা বিশ্বের কাছে এক অন্যতম সহনশীলতা ও মানবতার উদাহারণ হয়ে থাকবে।
ছাত্র ছাত্রীদের ট্রাফিক
পুলিশের দায়িত্ব পালন
পুলিশের
কর্মবিরতি ঘোষনা দেওয়ার ফলে সারাদেশে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে ব্যাপক যানজটের
সৃষ্টি হতে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সারাদেশের ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্কুল কলেজের
পোষাক পরিধান করে রাস্তায় নামে এবং ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে। তবে কেউ কেউ ব্যতিক্রম
ছিল অনেকেই শুধু দেখানোর জন্য ও ইউটিওব ও ফেইসবুক, টিকটকে ভিডিও আপলোড দেওয়ার জন্য
রাস্তার নেমেছে এবং অনেকে রঙ বেঙের শাড়ি পরে ট্রাফিক পুলিশের দ্বায়িত্ব পালন করেছে।
তবে এদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন, বেশিরভাগ মানুষ সারাদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে
ট্রাফিকের দায়িক্ত পালন করেছে।
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের
দেশত্যাগ ও জনতার হাতে আটক
শেখ
হাসিনার দেশ ত্যাগের পর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতা কর্মী, মন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্না
আমলা এবং প্রশাসনের কিছু লোক দেশ ত্যাগ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। বিমান বন্দর
দিয়ে ত্যাগ করতে গিয়ে অনেক এমপি মন্ত্রী আটক হন। তাই আত্বগোপনে থাকো নেতাকর্মীরা দেশ
থেকে পালানোর জন্য বিভিন্ন ছদ্যবেশ ধারণ করে। কিন্তু তারা নিজেদের শেষ রক্ষা করতে পারে
নী অনেক নেতার্মী। যেমন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক দেশ ত্যাগের
সময় আটক হন। আটক হন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক ও দরবেশ বাবা নামে খ্যাত শেখ হাসিনার বানিজ্য
বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তারা নদী পথে নৌকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের আটক
করা হয়। তাদের আটক নিয়ে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে; কোষ্টগার্ড সদস্যরা আনিসুল হককে চিনতে
পারে কিন্তু সালমান এফ রহমান তার লম্বা সাদা দাড়ি শেভ করেছিল তাই তাকে চিনতে পারে নি।
তাই আনিসুল হককে নিয়ে যখন চলে যাচ্ছিল তখন আনিসুল হক তাকে দেখিয়ে বলেছিল তাকে ধরেন
সে সালমান এফ রহমান।
শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনিকে নাকি তার ভাগ্নে ধরিয়ে দিয়েছে এটা কতটুকু সত্য তা আমি জানি না তবে কথিত আছে যে, দিপু মনি তার বোনের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন এবং তার ভাগ্নেকে লেখাপড়ার জন্য চাপ দিলে সে তার খালাকে ধরিয়ে দেয়। তবে দিপু মনিকে যখন আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার উপর আক্রমণ হয় যা ছিল খুবই দৃষ্টি কটু এবং অমানবিক। আক্রমণের ঘঠনা সাবেক বিচার পতি মনিকের সাথেও হয়েছে। তাকে মারধর করে আদালত প্রাঙ্গনে তার অন্ডকোষে আঘাত করা হয়। এই রকম ঘঠনা কখনো কাম্য নয় কারণ একজন আসামী বা অপরাধী যদি আদালত বা পুলিশ হেফাজতে নিরাপদ না থাকে তবে তা দুঃখজনক। সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন তার বিচার সাধারণ মানুষ করতে পারে না।