ভারতের সেভেন সিস্টার্স Seven Sisters শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক Chicken Neck ও বাংলাদেশ
ভারতের সেভেন সিস্টার্স Seven Sisters শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক Chicken Neck ও বাংলাদেশ
ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকাররের পতনের সাথে সাথে বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ভারত সরকারের সু সম্পর্ক ছিল এবং ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে সু-সম্পর্ক বজায় ছিল।
কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দুই দিন পর বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের
প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক স্বাক্ষাতকারে সরাসরি
বলেন- ভারত সরকার যদি বাংলাদেশের অবস্থা অস্থিতিশীল করতে চাই তবে মনে রাখবেন আপনাদের
সেভেন সিস্টার্স Seven Sisters অস্থিতিশীল
হবে। ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনায় আসে সেভেন সিস্টার্স Seven Sisters শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস
নেক Chicken Neck।
শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক Chicken Neck কি
চিকেন
নেক সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে হলে বাংলাদেশের চট্রগাম বিভাগ সম্পর্কে ধারনা নিতে হবে।
বাংলাদেশের সাথে চট্রগ্রামের স্থল সংযোগ রয়েছে শুধু ফেনি জেলার সামান্য কিছু অংশের।
ফেণি জেলার সাথে যদি চট্রগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে চট্রগ্রাম বাংলাদেশ
থেকে বিচ্ছিন হয়ে যাবে ঠিক তেমনি কোন কারণে শিলিগুড়ি করিডোর বন্ধ করে দিলে ভারত থেকে
তার সেভেন সিস্টারর্স বা সাত সাতটি অঙ্গরাজ্যে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তবে বাংলাদেশের
যেমন ফেনী সড়ক পথ ছাড়াও বিশাল জলপথ বা সমুদ্র রয়েছে কিন্তু ভারতের আর কোন অপশন নেই
কারণ উত্তরে নেপাল ও দক্ষিণে বাংলাদেশ আর চীন ও ভুটান রয়েছে।
শিলিগুড়ি
করিডোর বা Chicken Neck ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা।
ভারতের সাথে তার উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাতটি অঙ্গরাজ্যর সাথে ভৌগলিক ভাবে যোগাযোগের একমাত্র
রাস্তা হচ্ছে শিলিগুড়ি করিডোর। বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার শেষ সীমানা ও লেপালের সীমানার
মাঝামাঝি অংশের দূরত্ব ২২ কিলোমিটারের মতো এই সরু অংশ দিয়ে ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য
বা সেভেন সিস্টার্স এর সাথে যোগাযোগ করতে হয়।
পাশাপাশি
এই অংশটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান ও চীনের সীমানার কাছাকাছি অবস্থিত তাই এই অংশটা যদি
কোনভাবে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ভারত তার বিশাল অংশ সেভেন সিস্টার্স এর নিয়ন্ত্রণ হাড়াবে।
তাই শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক Chicken
Neck জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিলিগুড়ি শহরের কাছে অবস্থিত
এই জায়গাটি পৃথীবির মানচিত্রে মুরগীর বাকানো গাড়ের মতো দেখতে তাই একে চিকেনস নেক Chicken Neck বলা হয়।
সেভেন সিস্টার্স Seven Sisters কি
ভারত
এশিয়ার অন্যতম একটি বিশাল আয়াতনের দেশ। ভারত অসংখ্য অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত ভারতের উত্তর
পূর্বাঞ্চলের সাতটি অঙ্গরাজ্যকে একত্রে সেভেন সিস্টার্স Seven Sisters বলা হয়। সেভেন সিস্টার্স এর সাতটি অঙ্গরাজ্য হলো-
১। মেঘালয়
২। আসাম
৩। মিজোরাম
৪। ত্রিপুরা
৫। মনিপুর
৬। নাগাল্যান্ড ও
৭। অরুণাচল
এই
সাতটি অঙ্গরাজ্যের সাথে ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম
হলো শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেনস নেক। এবং কোন কারণে এই সরু রাস্তার নিয়ন্ত্রন যদি ভারতের
সাথে না থাকে তবে সেভেন সিস্টার্স ভারতের থেকে বিচ্ছিন হয়ে যাবে।
ভারতের কাছে সেভেন সিস্টার্স
বা চিকেনস নেক এর গুরুত্ব
ভারতের
প্রতিবেশীর যত দেশ আছে তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী খারাপ সর্ম্পক পাকিস্থান ও চিনের সাথে
এবং এবং এই দুটি দেশ খুবই শক্তিশালী এবং তাদের মধ্যে সিমান্ত সংঘাত লেগেই আছে। Seven Sisters এর অরুণাচল প্রদেশের সাথে চিনের
সীমানা রয়েছে এবং এই অঞ্চলে প্রতিনিয়ত চীন ভারত সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া সেভেন সিস্টার্স
এর ভিতরে পারস্পরিক সংঘাত ও ধর্মীয় সমস্যার কারণে এই অঞ্চলগুলো সব সময় রাজনৈতিক ভাবে
অস্থিতিশীল থাকে। মেঘালয়, আসাম, মনিপুর, ত্রিপুরা রাজ্য বিভিন্ন ধর্মের জনসংখ্যা বসবাস
করে আর তাদের মধ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত সমস্যার কারণে জনগণ সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে।
তাছাড়া
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সেভেন সিস্টার্স ভারতের অধীন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র
গঠন করতে চাই। আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরাতে অসংখ্য বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন স্বাধীনতার
জন্য আন্দোলন করছে। তাছাড়া কেন্দ্র থেকে সেভেন সিস্টার্স এর দূরত্ব বেশী ও দূর্গম অঞ্চল
হওয়ার কারণে এই অঞ্চল অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও অবহেলার স্বীকার হচ্ছে। তাই
ভারতের ভয় হচ্ছে এই Seven Sisters নিয়ে কারণ যদি এই অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে কেন্দ্র থেকে
সৈন্য ও গোলাবারদ সরবরাহ করতে অনেক সময় লাগবে। আর শিলিগুরি করিডোর কোন কারনে বন্ধ হয়ে
গেলে তা আর সম্ভব নয়।
সেভেন সিস্টার্স বা চিকেনস
নেক ও বাংলাদেশ
Seven Sisters এর ৭ টি রাজ্যের মধ্যে চারটি রাজ্য
যেমন মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম ও ত্রিপুরার সাথে বাংলাদেশের স্থল সীমা রয়েছে। এবং Chicken Neck বাংলাদেশের সীমানার সাথে অবস্থিত। তাই সেভেন সিস্টার্স এর সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ
ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন আগে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার মধ্যে একটি
চুক্তি স্বাক্ষর হয় এতে করে ভারত বাংলাদেশের উপর দিয়ে তাদের ট্রেন চলাচলের সুবিধা লাভ
করে। কিন্তু বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আর এই চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে কলকাতা থেকে ত্রিপুরা অল্প সময়ে যাতায়াত করা যেতো। তাই ভারত
সরকার সরাসরি আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে।
সেভেন সিস্টার্স ও দশট্রাক
অস্র
ভারতের
আওয়ামী প্রীতির আরেকটি কারণ হলো ভারত মনে করে আওয়ামীলীগ ব্যতিত অন্য কোন সরকার ক্ষমতায়
বসলে তা ভারতের Seven Sisters এর জন্য
হুমকিস্বরূপ। কারণ ২০০৪ সাথে এপ্রিল মাসে চট্রগ্রামের বাংলাদেশের আইশৃঙ্খলাবানীর হাতে
বিপুল পরিমাণ অস্র ও গোলাবারদ এর একটি চালন আটক হয়। ধারণা করা হয় বিএনপি সরকার এই দশ
ট্রাক অস্র গোলাবারদ সেভেন সিস্টার্স এর বিচ্ছিন্নতাবদি
সংগঠনের জন্য সরবরাহ করেছে।
পরবর্তীতে
স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বারব ও মতিউর রহমান নিজামীকে দশ ট্রাক অস্র মামলায়
আওয়ামীলীগ সরকার আসামী করে। তাই ভারত বিএনপি সরকারকে কখনো ক্ষমতায় দেখতে চায় না। Seven Sisters কোন অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি
হলে ভারতকে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়ন করতে হবে আর ভারতের সীমান্ত রাষ্ট্রের সাথে চীন ও
পাকিস্থান রয়েছে এই সুযোগে তার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করতে পারে তাই বর্তমান ভারত
সরকার বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিত ও শেখ হাসিনার পতনের জন্য চিন্তায় আছে এবং শেখ
হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় বসানোর জন্য চেষ্টা করছে।
কারণ
শেখ হাসিনা দূর্নীতি ও সন্ত্রাসীর উপর জিরো ট্রলারেন্স নীতি গ্রহন করে বাংলাদেশে আশ্রয়
নেওয়া অনেক ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদি ও জঙ্গী
সংগঠনকে দমন করেছে।
সেভেন সিস্টার্স ও আন্তর্জাতিক
রাজনীতি
ভারতের
সেভেন সিস্টার্স এর সাথে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও চীনের সরাসরি ভূমি সংযোগ
রয়েছে। তাই আন্তর্জাতীকভাবে এই অঞ্চলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মায়ানমার ভারতের সাথে সু
সর্ম্পক বজায় থাকলেও চিনের সাথে ভারতে সম্পর্ক ভালো না। তাই চীন সব সময় Seven Sisters এ স্বধীনতা কামী গোষ্টিকে সহযোগিতা
করে আসছে।
তাছাড়া
পাকিস্থান ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এবং পাকিস্থান ও চীনের শুত্রু
ভারত। আর বাংলাদেশে যদি বিএনপি বা ইসলামপন্ত্রী কোন দল ক্ষমতায় আসে তাহলে তারা পাকিস্থানকে
সমর্থন করবে। এই সুযোগে চীন ও পাকিস্থান Seven
Sisters এর অস্র ও গোলাবারদ বাংলাদেশের জলসীমা চট্রগ্রাম ব্যবহার করে সরবরাহ করতে
পারবে। যা ভারতের জন্য খুবই হুমকির তাই ভারত সরকার চাই বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ বা শেখ
হাসিনার শাসন।
তবে
ভারত মায়ানমার এর মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকার জন্য সেভেন সিস্টার্স দখল বা স্বাধীনতা
এত সহজে সম্ভব না। কারন সেভেন সিস্টার্স এর রাজ্যেগুলোতে কোন সমস্য হলে এর প্রভাব বাংলাদেশেও
পড়বে।