কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতন ও প্রশাসনের রদবদল এবং নতুন সমস্যা
কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতন ও প্রশাসনের রদবদল এবং নতুন সমস্যা
কোটা
সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র গত জুলাই আগষ্ট মাসে যে ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে তার সাক্ষি
হয়ে থাকবে এই প্রজন্ম। ৫ আগষ্ট ২০২৪ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের বহুল আলোচিত
বাংলাদেশের দ্বীর্ঘ সময়ের একটানা ক্ষমতায় থাকা প্রধান মন্ত্রি যিনি বর্তমান জেন জি
প্রজন্মের কাছে বা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে স্বৈরশাসক নামে পরিচিত শেখ হাসিনা চাপের
মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করার পর সাধারণ নাগরিক
নতুন করে স্বধীনতার স্বাদ গ্রহণ করে। তবে সরকারের পতনের পর অর্ন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায়
বসার সাথে সাথে দেশে কিছু পরিবর্তন ও নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয় তা নিচে আলোচনা করা
হলো।
আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা ও পলায়ন
শেখ
হাসিনার দেশত্যাগ ও আওয়ামীলীগের ক্ষমতা দেশ দেশ মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামীলীগের
নেতাকর্মী ও এমপি মন্ত্রিদের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, মারধোর ও গগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর হয়। বিভিন্ন
এমপি মন্ত্রিদের বাড়িতে হামলা ও লোট হয়। যার ফলে নেতাকর্মীরা তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে
আত্মগোপনে যায় এবং অনেকে দেশ থেকে পালায়ন করে। শুধু নেতাকর্মী না আওয়ামীলীগ এর আমলে
যে সব আপলারা সুযোগ সুবিধা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাদেরকেও ছাড় দেওয়া হয় নাই।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের
রদবদল আমলা ও পদত্যাগ
সরকার
পতনের সাথে সাথে বাংলাদেশের প্রশাসনে ও কর্মকর্তাদের বদলী ও চাকুরী থেকে অব্যহতির ঘটনা
ঘটে। অনেকে বাধ্যতামূলক অবসরে দেওয়া হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের সময় যারা চুক্তিভিত্তিক
নিয়োগ পেয়েছিল তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সচিব ও পরিচালকদের
বদলী ও চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা গণহারে
পদত্যাগ করে এবং অনেকে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বিভিন্ন স্কুল
কলেজের শিক্ষককে লাঞ্চিত করা হয়। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যাক্তি ছিল অসৎ ও দুর্নীতে
পরায়ন।
বিচারপতিদের পদত্যাগের হিরিক
আওয়ামীলীগ
সরকারের পতনের পর ১০ ই আগষ্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় প্রাধান বিচার পতিকে, তার পদত্যাগের
পর দলে দলে অন্যান্য বিচারপতিরা পদত্যাগ করেন। সাতে এটর্ণী জেনারেল সহ অনেকেই পদত্যাগ
করেন। নতুন বিচারপতি হিসাবে শপত গ্রহন করেন সৈয়দ রিফাত হাসান প্রধান এটর্নী জেনারেল
আমিন উদ্দিনের জায়গায় নিয়োগ পান মোঃ আসাদুজ্জামান তবে তাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।
তিনি বিএনপির আইনজিবী হিসাবে পরিচিত এবং ধারণা করা হয় বিএনপির সুপারিশে তাকে নিয়োগ
দেওয়া হয়।
জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত
ও প্রশাসক নিয়োগ
আওয়ামীলীগের
আমলে নির্বাচনের কারচুপি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির জন্য সারা দেশের সকল
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র সহ সকলকে বরখাস্ত করা হয়
এবং সেই স্থলে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার
ভূমি কে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যানের ব্যপারে পরবর্তীতে
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আনসার বাহিনীর আন্দোলন
ও ব্যাপক সমালোচনা
নতুন
সরকার গঠন হওয়ার পর দেশের কঠিন পরিস্থিতিতে সারাদেশের আনসার বাহিনী কর্ম বিরতী ঘোষনা
করে এবং তাদের চাকরি স্থায়ী করা সহ বিভিন্ন দবি নিয়ে আন্দোলনে নামে। তখন ফেণী কুমিল্লা,
নোয়াখালী অঞ্চলে ব্যাপক বন্যায় দেশের দেশের পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। তখন তাদের আন্দোলন
ও সচিবালয় গেরাও করে ছাত্রদের মারধর করে। এতে সাধারণ জনগণ তাদের খুব নিন্দা করে এবং
ছাত্র জনতা একত্রিত হয়ে আনসার বাহিনীকে দাওয়া করে বিতারিত করে। তাছাড়া ভারতীয় বাধ খুলে
দেওয়ায় দেশের বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারন করে। দেশের জনগণের ব্যাপক সাহায্যের
হাত বাড়িয়ে দেয় এবং আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন ও আহাম্মউল্লাহ হুজুর ব্যাপক আলোচনায় আসে।
ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও
খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল
ড.
মোহাম্মদ ইউনুস শপত গ্রহন করার পর বিএনপির চেয়ারপরসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা
জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। এবং ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও গ্রামীন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা
পরিচালকের নামে শ্রম আইনে যে মামলা সে মামলায়
তাদের ছয় মাসের সাজার রায় হয় তা বাতিল করা হয়। শেখ হাসিনার আমলে যারা মিথ্যা মামলার
স্বীকার হয়ে করা বন্দী ছিল তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে বেশী আলোচনায় আসে জামায়াতে
ইসলামী বাংলাদেশ। কিছুদিন আগেই আওয়ামীলীগ সরকার জামায়তে ইলামীর নিবন্ধন বাতিল করে কিন্তু
সময়ের ব্যাবধানে তারা হয়ে উঠে বাংলাদেরশের রাজনীতির আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। জামাত শিবিরের অসংখ্য নেতা কর্মীকে
মুক্তি দেওয়া হয় এবং ইসলামী দল সহ অন্যান্য দলের কর্মীদের মুক্তি দেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামের জনপ্রিয়তা
জামায়াতে
ইসলামী বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামী রাজনৈতিক দল, শেখ হাসিনার আমলে এই দল সবচেয়ে
বেশি বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে। এখন শেখ হাসিনার পতনের পর তারা সবচেয়ে বিশী জনপ্রিয় এবং
আলোচনায় রয়েছে। জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
ভাইরাল হচ্ছে এবং দেশের একটা বিরাট অংশ মনে করছে আগামী নির্বাচনে জামায়তে ইসলামী বাংলাদেশ
যদি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে জোট করে নির্বাচনে আসে তবে এবার বাংলাদেশে ইসলামী
দলগুলোর সরকার গঠন করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু জামায়াত পূর্বের সকল নির্বাচন বিএনপির
সাথে জোট করে করে আসছে এখন তারা কি সিদ্ধান্ত সেটা সময়ের অপেক্ষা। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ
জনগন মুসলিম হলেও তাদের মধ্যে ইসলামী শাসন প্রতিষ্টার প্রতি কতটা আগ্রহ রয়েছে সেটা
স্পষ্ট করে বলা কঠিন। তবে জামায়াতের রাজনৈতিক কিছু মতাদর্শ পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ থেকে
শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে গেলে তাদের মধ্যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ
এখন মাইনাস টু ফর্মূলার দিকেই মতামত প্রদান করছে।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের
নেতাকর্মীদের উপর হত্যা ও গুমের মামলা
শেখ
হাসিনা সরকারের আমলে নির্বিচারে ছাত্র ও জনতার খুন ও গুমের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামীলীগ
সরকার তার শাসনামলে আয়না ঘর নামে একটি টর্চার সেল তৈরী করে যাতে অসংখ্য মানুষকে বন্দি
করে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাকালীন সময়ে জনগণের
বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়।
সরকারের
বিরোদ্ধে কেউ কিছু বললে হয় তাকে গুম করে হত্যা করা হতো না হয় তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে
গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হতো। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার নামে ও তার নেতাকর্মীদের
নামে হত্যা, গুম সহ অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়।
তাছাড়া
কোটা সংস্কার আন্দোলনে যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড হয়েছে নিরীহ জনগণ ও ছাত্রদের যেভাবে
হত্যা করা হয়েছে তার বিচার ও অপরাধীদের সনাক্ত করতে আদাল কমিশন গঠন করা হয়েছে।
১৫ ই আগষ্ট এর ছুটি বাতিল
১৫ই
আগষ্ট ১৯৭৫ সালে শেখ মজিবুর রহমান সহ তার পরিবারের শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা ছাড়া সকল
সদস্যদের তৎকালীন কিছু আর্মী অফিসার নির্মমভাবে হত্যা করেছ। আর শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায়
এসে ১৫ ই আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারী ছুটি ঘোষনা করে কিন্তু অর্ন্তবর্তী সরকার এই
সরকারী ছুটি বাতিল ঘোষনা করে। এবং দ্বীর্ঘবছর পর ১৫ ই আগষ্ট সরকারী অফিস আদালত সহ সকল
প্রতিষ্টান তাদের স্বাবাভিক কাজ অব্যহত রাখে।
শিক্ষা খাতের পরিবর্তন
ও এইচ এস সি পরিক্ষা
শেখ
হাসিনা সরকারের শিক্ষানীতি বাতিল করে খুব তারাতারি পূর্বের শিক্ষা নীতি প্রনয়নের জন্য
সিদ্বান্ত গৃহীত হয়। তবে বর্তমানে যে পদ্বতি চালু আছে তা আস্তে আস্তে পরিবর্তন করা
হবে। পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন আগামী বছর থেকে করা হবে।
এইচ
এস সি পরিক্ষার্থীদের পরিক্ষা বন্যা ও দেশের পরিস্থিতির জন্য নেওয়া সম্ভব নয়নাই তাই
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ও সার্বীক অবস্থার কথা চিন্তা করে অবশিষ্ট পরিক্ষা স্থগিত
করা হয় এবং পরিক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করা হবে তাদের বিগত জেএসসি ও এসএসসি পারিক্ষার
উপর এবং যে পরিক্ষাগুলো অনুষ্টিত হয়েছে সে ফলাফলের উপর ভিত্তি করে।