নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
ড. মোহাম্মদ ইউনুসের শৈশব ও শিক্ষাজীবন
অবিভক্ত বাংলার বর্তমান বাংলাদেশের
চট্রগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার বাথুরা গ্রামে ১৯৮০ সালের ২৮ জুন ড. মোহাম্মদ ইউনুস
জন্মগ্রহন করেন। চট্রগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৬ তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং ভর্তি হন চট্রগ্রাম কলেজে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মান ও এমএ পাশ করে ১৯৬৯ সালে স্কলারশীপ নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের ভেন্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের জন্য জনমত ও বিদেশীদের সাহায্য
লাভের জন্য কাজ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে এস ১৯৭২ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ব
বিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসাবে
দাযিক্ত প্রালন করেন।
মোহাম্মদ ইউনুস ও গ্রামীন ব্যাংক
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নোবেল শান্তি
পুরষ্কার লাভ করার গৌরভ অর্জন করেন ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও তার প্রতিষ্টিত গ্রামীন ব্যাংক।
মোহাম্মদ ইউনুস মূলত চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন
এবং তিনি ১৯৭৬ সালে গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্টা করেন। তিনি ও তার প্রতিষ্টান মূলত গ্রামীন
অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করে কিন্তু তিনি
ও তার প্রতিষ্টান ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল লাভ করেন। শান্তিতে নোবেল লাভ করার
মূল কারণ হলো তিনি এবং গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামের অসহায় মহিলাদের জীবনে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে
তাদের স্বাবলম্বী করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্টা করেছেন তাই তাকে ও গ্রামীন ব্যাংকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়।
ড. মোহাম্মদ ইউনুসে গ্রামীন ব্যাংক
প্রতিষ্টার পিছনে মূল গল্প হলো চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত জোবরা গ্রাম।
এই গ্রামের হতদরিদ্র লোকজনের অবস্থা দেখে তিনি ভাবলেন যে তিনি অর্থনীতির শিক্ষক হয়ে
এত জ্ঞান অর্জন করে যদি সমাজের মানুষের বা
দেশের জন্য কিছু করতে না পারেন তাহলে তারা এত লেখাপড়া বা ডিগ্রীর মানে কি? তাই তিনি
তাদের জন্য কিছু করার জন্য সেখানকার কৃষকদের কৃষিকাজ করার জন্য উৎসাহ দিলেন কিন্তু
সেখানে পানির ব্যবস্থা না থাকার কারণে চাষাবাদ করা সম্ভব ছিল না তাই তিনি নিজ উদ্ধোগে
পানির ব্যবস্থা করলেন। তারপর তিনি সেখানে তেভাগা চাষাবাদ চালু করেন এবং গ্রামের মহিলাদের
আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ঋণ চালু করেন। ফলে সমাজে অনেক
ক্ষুদ্র ব্যবসা ও খামার গড়ে উঠে এবং গ্রামীন সমাজের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা
লাভ করে এবং সামাজিক বিভিন্ন অপরাধ যেমন- বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারী নির্যাতন, চুরি ইত্যাদি
কমতে থাকে। এখানে সফলতা লাভ করার পর তিনি আস্তে আস্তে সারা বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা বিস্তার
করেন এবং যা পরবর্তীতে রূপ নেয়ে গ্রামীন ব্যাংকে।
শেখ
হাসিনার সাথে ইউনুসের সম্পর্ক
প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ হাসিনা ও ড. মোহাম্মদ
ইউনুসের সম্পর্ক ভালো ছিল। তিনি নোবেল লাভ
করার পর থেকে তিনি দেশের মানুষের অনেক প্রিয় এবং আস্থা ভাজন হয়ে উঠেন। তবে দেশের আলেম
সমাজ ও ইসলাম প্রিয় মানুষ ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে সুদখোর বলে অভিহিত করে। পরবর্তীতে ২০০৭ সাথে দেশের করুন পরিস্থিতিতে তত্বাবধায়ক
সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল ড. মোহাম্মদ ইউনুস সাহেবকে আহ্বান
করেন।
১/১১
মাইনাস টু ফর্মূলা ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস
ড. মোহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা
না হয়ে উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন এবং তিনি নিজে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তু করেন। তার
গঠিত রাজনৈতিক দলেন নাম ছিল “নাগরিক শক্তি”। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা লাভ করার পর ড.
মোহাম্মদ ই্উনুসকে তার প্রতিপক্ষ মনে করেন এবং ১/১১ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামীলীগ
ও বিএনপি কে রাজনীতির মাঠ থেকে মাইনাস করে দেওয়ার জন্য যে মাইনাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়ন
করা হয়েছিল ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে এই মাইনাস টু ফর্মূলার মাষ্টার মাইন্ড হিসাবে মনে করেন
শেখ হাসিনা। ফলে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে এবং শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক
প্রভাব খাটিয়ে ইউনুসকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করার পথ খুজতে থাকে।
গ্রামীন
ব্যাংক থেকে অব্যহতি
ড. মোহাম্মদ ইউনুসের বিরোদ্ধে তার প্রতিষ্টিত
প্রতিষ্টান গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীন টেলিকমের শেয়ার আত্বসাৎ, কর ফাকি, দূর্নীতি, কর্মচারীদের
বেতন ভাতা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয় এবং গ্রামীন ব্যাংক থেকে তাকে
বহিষ্কার করা হয়। তার বয়স বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিয়ম অনুসারে ২০১১
সালের ২রা মার্চ গ্রামীন ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্বে থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। তিনি এতদিন
বেশি বয়স নিয়ে দায়িক্ত প্রালন করে আসছেন এবং এটা তার প্রতিষ্টিত এতদিন কেউ আপত্তি করে
নাই কিন্তু এখন করছে তাই তাকে অপসারণ করা হয়।
পদ্মা
সেতু ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস
এরপর শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু তৈরীর প্রকল্প
বাস্তবায়নের জন্য বিদেশী সাহায্য ও বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংক দূর্নীতির
অভিযোগে ঋণ বন্ধ করে দেয়। এই কারণে শেখ হাসিনা ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে দোষারোপ করে। ড.
মোহাম্মদ ইউনুস এক স্বাক্ষাতকারে বলেন“আমার বাধা দেওয়ার তো কোন প্রশ্ন উঠে না, আর বিশ্ব
ব্যাংক তো আমার কথা শুনার জন্য বসে নেই। বরং তারা বলছে যে এতে দূর্নীতি হয়েছে।” প্রধান
মন্ত্রি শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্ভোধনের সময় বলেছেন ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে পদ্মা নদীতে
ফেলে পানিতে চুাবানো দরকার। ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর মতে শেখ হাসিনার সাথে তার সম্পর্ক
খারাপ হওয়ার পিছনে মূল কারণ হলো তার রাজনীতিতে আসা।
শেখ
হাসিনার সাথে বিরোধের চুরান্ত পরিনতি
১/১১ সময় মাইনাস ২ ফর্মূলা বাস্তবায়ন,
পদ্মা সেতুতে বাধা, রাজনৈতিক দল গঠন ইত্যাদি কারণে ড. মোহাম্মদ ইউনুস শেখ হাসিনা ও
আওয়ামীলীগের কাছে ছিল একজন সুদখোর দুর্নীতি বাজ লোক। কিন্তু তিনি সারা পৃথিবীতে অনেক
সুনাম অর্জন করেছে এবং আমেরিকার হিলারী ক্লিন্টন, বারাক উবামা সহ অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিদের
সাথে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সু সর্ম্পক রয়েছে। কথিত আছে যে ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে শুধু
মামলা ও গ্রামীন ব্যাংক থেকে বিতারিত করেই শেখ হাসিনা তাকে রেহাই দেন নী। বৃদ্ধ ইউনুস
যখন মামলার সুনানীর জন্য কোর্ট ভবনে যেতেন তখন তার মামলা কিভাবে যেন ৮ তলা বা ৯ তলাতে
শুনানী করা হতো এবং দুঃখের বিষয় এই যে, ইউনুস সাহেব যখন হাজিরা দিতে আসতেন তখন অটোমেটিক
লিফটগুলো বন্ধ হয়ে যেতো এবং ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে এই বৃদ্ধ বয়সে পায়ে হেটে উপরে উঠতে
হতো।
নোবেল
বিজয়ী থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বীকালীন সরকারের প্রধান উপদষ্টো
৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা ছাত্র জনতার আন্দোলনের
মুখে ক্ষমতা ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে ছাত্র সমাজ একজন অন্তর্বতীকালীন সরকাররের
প্রধান উপদেষ্টার শুন্যতা অনুভব করে। তারা সৎ যোগ্য ও আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য
একজন মানুষকে ক্ষমতায় বসাতে চাইলেন। এবং সর্ব সম্মতিক্রমে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবীদ ড.
মোহাম্মদ ইউনুসের নাম প্রস্তাব করা হয় এবং সকলে গ্রহণ করে। তখন তিনি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক
গেমসের অনুষ্টানে যোগ দিতে প্যারিসে অবস্থান করছিলেন। ছাত্ররা দেশের এই অবস্থায় তাকে
দায়িক্ত গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি ছাত্রদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ৮ আগষ্ট দেশে
ফিরে বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
সমালোচনা
ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং তার গ্রামীন ব্যাংক
ড. মোহাম্মদ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক
ও ক্ষুদ্রঋন বা মাইক্রোফাইন্যান্স সারা বিশ্বে ব্যাপকসাড়া ও প্রশংসা পেলেও ড. মোহাম্মদ
ইউনুস তার নিজের দেশের মানুষের থেকে পেয়েছেন অপমান ও অবহেলা। তাকে বাংলাদেশের অধিকাংশ
আলেম ও মুসলিম স্কলার্স সুদখোর ও মুসলিম মহিলাদের বেপর্দা করে বের করে বাইরে নিয়ে আসার
জনক বলে থাকে। অনেকে ধারণা করে বাংলাদেশে কেউ গ্রামীন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লাভবান তো
দূরের কথা সুদের ভোজা মাথায় নিয়ে ঘড় বাড়ি ছাড়া
হয়েছেন। গ্রামীন ব্যাংক নাকি অনেক বেশি সুদ গ্রহণ করে। আবার তার বিরোদ্ধে গ্রামীন ব্যাংক
ও গ্রামীন টেলিকমের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সরকাররে কর বা রাজস্ব
ফাকি দিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।